'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বঘোষিত দোসর গ্রুপটির চেয়ারম্যান আকবর সোবহানকে নিজ হাতে তুলে কেক খাইয়ে দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। শুধু তাই নয়, এসময় বিগত সরকারের নেপথ্য কারিগর বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ভূয়সি প্রশংসা করতেও দেখা যায় লাল গোলাপ খ্যাত এই প্রবীণ সাংবাদিককে।
শফিক রেহমান এসময় আকবর সোহানকে অমায়িক ও অসাধারণ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেন। তার এই অবাক কাণ্ড নিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন তার দীর্ঘদিনের ভক্ত-শুভাকাঙ্খীরাও।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি বিপ্লবের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ৯০ ঊর্ধ্ব শফিক রেহমানের এমন অধঃপতনে বিস্মিত নেটিজেনরা বলছেন, "মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কি?"। প্রথম দেখায় তার এমন কাণ্ড সত্য বলে বিশ্বাসই করতে পারেননি অনেকে। তাই ঘটনার সত্যতা জানতে দৈনিক ইনকিলাবের অনেক পাঠককে এ নিয়ে নিউজরুমে ফোন করতেও দেখা গেছে।
নেটিজেনরা সমালোচনা করে লিখেছেন, ছাত্র-জনতার গণহত্যায় যেসব ফ্যাসিস্ট সাংবাদিক ভূমিকা রেখেছে দুঃখজনকভাবে শফিক রেহমান তাদেরকে সাথে নিয়ে চলছেন। হাসিনার দোসর বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে নিজ হাতে শুধু কেক খাইয়ে দেন নাই তিনি তার ভূয়সি প্রশংসাও করেছেন। তার এমন আচরণ শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মার সাথে চরম বেইমানি।
সাংবাদিক নাজমুস সাকিব এই ঘটনায় "ভূমিদস্যু বসুন্ধরার শাহ আলমের কাছে নিজেকে বিক্রি করলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান!" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
সেখানে তিনি বলেন, কৈশোরে বিটিভিতে জনপ্রিয় আট শো অনুষ্ঠান 'লাল গোলাপ' শুরু হওয়া মাত্র আমরা টিভি স্ক্রিনের সামনে সকল কাজ ফেলে ছুটে যেতাম। আমার মত একজন তরুণ সাংবাদিক বা অনলাইন অ্যাক্টিভেস্ট এর কাছে ৯১ বছর বয়সী শফিক রেহমান একজন জীবন্ত কিংবদন্তি এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। এ কারণেই বছরখানেক আগে আমি যখন লন্ডন সফর করেছিলাম আমি বহু কষ্টে তার ঠিকানা জোগাড় করে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তার সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনের নানা দিক এবং যে প্রক্রিয়াতে তার যায়যায়দিন পত্রিকাটি ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় দখল করা হয়েছিল এসব বিষয়ে বেশ খোলামেলা আলোচনা হয়েছিল। তার কাছ থেকেই জানতে পেরেছিলাম যায়যায়দিন কিভাবে হাতছাড়া হয়েছিল এবং কুখ্যাত ভূমিদস্য গ্রুপ বসুন্ধরা সেক্ষেত্রে কি ধরনের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা রেখেছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট এর পটপরিবর্তনের পর তিনি যায়যায়দিন ফেরত পাবেন, নতুন ভাবে এর যাত্রা শুরু করবেন এটাই হল বাস্তবতা। কিন্তু আমরা কল্পনাও করিনি কুখ্যাত ভূমিদস্য এবং পতিত স্বৈরাচার হাসিনার অন্যতম দোসর ভূমিদস্য আহমদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে যায়যায়দিনের এই নবযাত্রা করবেন। পত্রিকাটির এই নতুন যাত্রায় তার সাথে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে আছেন তিনি মহা বাটপার শামসুল আলম লিটন। আমরা জানতে পেরেছি এই শামসুল আলম লিটনই ভূমিদস্য আহমদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের সাথে শফিক রেহমানের লিয়াজু করে দিয়েছেন। তবে আমি এটাকে ব্যক্তিগতভাবে একমাত্র কারণ বলে মনে করি না । কারণ তিনি তো কোন অবুঝ শিশু নয়। আপনি জানেন যে, শাহ আলম হাসিনার অন্যতম দোসর। সে হাসিনাকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছিল এবং প্রকাশ্যে সে বলেছিল, মৃত্যুর আগেও শেখ হাসিনার সাথে আছে এবং মৃত্যুর পরেও হাসিনার সাথেই থাকতে চাই।
সমালোচনা করে নাজমুস সাকিব আরো বলেন, আজ নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে শফিক রেহমানের মতো একজন মানুষ নিজেকে নর্দমার কিটে পরিণত করলেন। তিনি আজ বসুন্ধরার মালিকানাধীন কালের কন্ঠের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে গিয়ে নিজ হাতে এই ভূমিদস্যু শাহ আলমের মুখে কেক তুলে খাইয়ে দিয়েছেন। তিনি এই অনুষ্ঠানে যেভাবে শাহ আলমের প্রশংসা করেছেন সেটা শুনে আমি আমার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারিনি। সাংবাদিকতা জগতের আইডল এই শফিক রেহমানের অধঃপতনে আমরা বিস্মিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শফিক রেহমানের সমালোচনার ঝড় বইছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান সমালোচনা করে বলেছেন, "টাকাটাই শেষ কথা বাকি সব বাতুলতা"। টাকা কথা রাখে, সারা পৃথিবীতেই টাকা কথা রাখে। কিন্তু আমাদের সমাজে একটু বেশি রাখে।পৃথিবীতে সবকিছুই টাকা চাইলে কিনতে পারে না। সারা পৃথিবীতে বাস্তবে সে অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে শফিক রেহমান ৯০ বছর বয়সে বিক্রি হয়ে যান।বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করে গেছেন সেই শফিক রেহমান কালের কণ্ঠে গেলেন এবং ভুইসী প্রশংসা করলেন।
আলোচিত প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের কড়া সমালোচনা করে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেখেছেন, নিজ ইনসটিংক্টের প্রতি আমার সব সময়ই আস্থা ছিলো, থাকবে। সে কারণে, পরিচিত অনেকেরই শফিক রেহমানের প্রতি ব্যাপক সম্মান থাকলেও আমি কখনোই এই লোককে সিরিয়াসলি রিগার্ড করিনি। প্রতি সন্ধ্যায় গলা দিয়ে বাধ্যতামূলক এক-দুই গ্লাস লাল পানি পড়লেই যিনি খিস্তি আওড়ান, এমন লোককে বিশেষ কিছু ভাবা, অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা, হবেও না।
কাগুজে গোলাপ শফিক, আজ তার অওকাদ বা অবস্থান আবারো পরিস্কার করলো। ভূমিদস্যু, স্বৈরাচারের দোসর শাহ আলমকে মুখে তুলে কেক খাইয়ে দিয়ে এই লোক তার নোংরা ব্যক্তিত্বই আবার প্রকাশ করলো।
ফেস দ পিপলের সাইফুর রহমান সাগর লিখেছেন, জনাব শফিক রেহমান সাহেব আর সাংবাদিক নেতা কাদের গনি সাহেব। গনি সাহেবকে আগের সরকারের আমলে কখনো কথা বলার জন্য পাইনি। ভয়ে কথাই বলতেন না। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান সাহেব, আপনি কিসের বদৌলতে বসুন্ধরার মালিককে পাশে নিয়ে কথা বলছেন? শাহআলম সাহেবের আন্দোলনকালীন সময়ের কথাগুলি এখনো সবার মনে দাগ কেটে রেখেছে। আপনারা বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক করার জন্য কি ধরণের সন্ধি করেছেন জাতি জানতে চায়।
খন্দকার আকবর হোসেন লিখেছেন, কৈশোর থেকেই আপনাকে একজন চিরসবুজ আপোষহীন সাংবাদিক, লেখক আর তরুণদের আইডল মনে করতাম। সত্যের পক্ষে থাকার জন্য আপনার মতো একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষকেও পতিত অবৈধ সরকারের জেল-জুলুমের স্বীকার হতে হয়েছে। অথচ এই আপনিই যখন পতিত স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট মাফিয়া শেখ হাসিনার একজন অলিগার্কের আমন্ত্রন গ্রহন করে তার পাশে দাঁড়ান, তখন জুলাই-আগষ্টের রক্তঝরা বিপ্লবে শহীদের আত্মারা, হাজারো আহতরা, তাঁদের আত্মীয়-স্বজনরাসহ আমাদের মতো আম-জনতারা প্রচন্ড কষ্ট পায়। নিজের প্রতি বিশ্বাসও উঠে যায়।শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান, এ কষ্ট দেবার কোন অধিকার আপনার নেই। খুব বাজে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন।
আলমগীর হোসাইন শাহিন লিখেছেন, মিঃ শফিক রেহমান আপনি উচ্ছিষ্ট ভোগীর প্রথম কাতারে সামিল। দুঃখ জনক, লজ্জাজনক!! ছিঃ ছিঃ ছিঃ। ওয়াক থু মিষ্টার লাল গোলাপ, আপনি এখন থেকে ধুতরা ফুলের অনুষ্ঠান করেন। বাংলাদেশ, গনতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং স্বাধীনতার শত্রু, বৈষম্যের মদদদাতা শিল্প পরিবারের প্রধান সমর্থক এবং সহোযোগীকে কেক খাইয়ে আপনি বুড়ো বয়সে জাতীর সাথে মসকারা নামক বেয়াদবি করলেন।
জিহাদ আল ফয়সাল লিখেছেন, আমি এভারগ্রীন বলতে যা বুঝতাম তা ছিলো শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান। উনার এই অধ:পতন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব!!!
মাহবুবুর রশিদ নামে একজন লিখেছেন, শফিক রেহমান আমরা আপনাকে কিন্তু মাথায় তুলেছি। নিচে নামাতে সময় লাগবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে লক্ষ্মীপুরে লিফলেট বিতরণ
মেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষে নিহত ৩, নিখোঁজ ১
হবিগঞ্জের সড়কে প্রাণ গেল তিন নারী পোশাক শ্রমিকের
বরিশালে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত পাক অপসারণে নগর ভবনকে সড়ক অধিদপ্তরের চিঠি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাতাহাতি, আহত ৩
দুইবার আবেদন করেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় মাল্টার নাগরিকত্ব পায়নি তারিক সিদ্দিকের পরিবার
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিল শুরু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
মায়ের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে হাসপাতালে তারেক রহমান
রাজশাহীতে এবেলা ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় পিছু হটল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ
আশুলিয়ায় মেরামতের নাম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে
'বিয়ের গন্ডগোল' নিয়ে জোভান–তটিনী আত্মপ্রকাশ
ভারতে বসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন ফ্যাসিস্টের দোসর আলাউদ্দিন নাসিম
রুশ জ্বালানিখাতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা
সিরিয়ার দামেস্কের মসজিদে পদদলিত হয়ে নিহত ৪ জন
কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসছে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল
খাদ্য পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজর রাখতে পুনর্গঠন হলো এফপিএমসি
দেশে অস্তিত্বহীন দলবাজরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করছে: জয়নুল আবদিন ফারুক
ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা